সিবিএন:

আশ্রিত রোহিঙ্গাদের একটি নির্ধারিত স্থানে রাখতে সরকারের উদ্যোগ কঠোরভাবে বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। এ কারণে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-উপসড়কে ১৩৮ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।

এরই মাঝে কক্সবাজার জেলার মেরিন ড্রাইভসহ বিভিন্ন সড়কে ১৫টি চেকপোস্ট ২৪ ঘণ্টা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে যানবাহন থেকে ৫ শতাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে আটক করে কুতুপালং ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে।

জেলা পুলিশ ও র্যাব-৭ সদস্যরা পৃথক এ অভিযান চালান। চেকপোস্ট অব্যাহত রাখতে কক্সবাজারে অতিরিক্ত ৪০০ বিভিন্ন পদবীর পুলিশ চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশের মুখপাত্র আফরোজ-উল হক টুটুল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিজ দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। তাদের অবস্থান এবং গতিবিধি শুধুমাত্র কক্সবাজারের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে সীমাবদ্ধ থাকবে। ক্যাম্পের বাইরে কোনো পরিচিতদের বাড়িতে অবস্থান ও আশ্রয় কিংবা বাড়িভাড়াও নিতে পারবেন না। এ ব্যাপারে জেলা শহরসহ এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মতে রোহিঙ্গারা নির্দিষ্ট ক্যাম্পের বাইরে অন্যান্য স্থানে যাতায়াত করতে পারবে না। সব ধরনের পরিবহন সংশ্লিষ্টদের তাদের বহন না করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। এরপরও অর্থলোভী কিছু পরিবহন সংশ্লিষ্টরা তাদের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করছে বলে খবর আসায় পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের সবকটি সড়ক-নৌ-রেল ও আকাশ পথে তদারকি বাড়ানো হয়েছে।

সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলায় ১৫টিসহ পুরো চট্টগ্রামে ১৩৮টি চেকপোস্ট কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার সেসব পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশি চালিয়ে ২৫০ রোহিঙ্গাকে শনাক্ত করে কুতুপালং পাঠানো হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেউ আশ্রয়, বাড়িভাড়া দেয়ার অথবা তাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ার অথবা অবস্থানের খবর জানলে প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।

এদিকে, র্যাব-৭ কক্সবাজার ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর মো. রুহুল আমিন জানান, কক্সবাজারের লিংকরোড় এলাকায় বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চেকপোস্ট বসায় র্যাব সদস্যরা। চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে ২৫০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু শনাক্ত করে কুতুপালং ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের এক জায়গায় রাখার উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট বাসস্থান, খাওয়া ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ও সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে চলছে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন। কিন্তু রোহিঙ্গারা নির্ধারিত ক্যাম্প এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি নিজ দেশে ফেরত যেতেও বেগ পাবেন।

তারা লুকিয়ে কোথাও আশ্রয় নিলেও আমৃত্যু কোনো পরিচিতি ছাড়াই অবৈধ অভিবাসী হিসেবে থাকবেন। তাই আশ্রিতদের কল্যাণে তাদের এক জায়গায় রাখতে চেষ্টা চলছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণের আন্তরিক সহায়তা একান্ত দরকার।

এখন তল্লাশিতে রোহিঙ্গা পেলে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের শুধু সতর্ক করা হচ্ছে। আগামীতে রোহিঙ্গা যেখানে পাওয়া যাবে সেসব এলাকার সংশ্লিষ্টদের সাজার মুখোমুখী করা হবে।